স্বদেশ ডেস্ক:
রাশিয়ার জন্য তো বটেই বাকি বিশ্বের জন্যও শনিবার দিনটি ছিল একইসাথে বিস্ময় এবং উদ্বেগের।
বেসরকারি ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনারের হাজার হাজার যোদ্ধা রুশ সামরিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একরকম বিদ্রোহ ঘোষণা করে মস্কোর দিকে এগুতে শুরু করে। তবে ক্রেমলিনের সাথে এক বোঝাপড়ার পর তারা ক্ষান্ত দেয়।
শেষ মুহূর্তের সেই চুক্তি অনুযায়ী বোঝাপড়া হয় যে ওয়াগনারের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন দেশ ছেড়ে বেলারুশে চলে যাবেন এবং যেসব ওয়াগনার যোদ্ধা সরাসরি ওই বিদ্রোহে অংশ নেয়নি তাদের রুশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।
ক্রেমলিনের সাথে চুক্তির পর সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল টেলিগ্রামে এক পোস্টে প্রিগোঝিন বলেন, তিনি সম্ভবত রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে ইঙ্গিত করেন– ওয়াগনারকে ‘ভেঙে’ দিতে চায়। কিন্তু সেটাই যে তার এই বিদ্রোহের প্রধান কারণ ছিল তা এখনো নিশ্চিত নয়।
শনিবার থেকে তার কাছ থেকে কিছু শোনা যাচ্ছিল না। কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় প্রিগোঝিন এক অডিও বার্তা প্রচার করেন। যেখানে তিনি বলেন, তার কোনো সহযোগী বা যোদ্ধা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে চুক্তিতে সই করতে রাজী নয় এবং তিনি বলেন পহেলা জুলাইয়ের পর তার প্রতিষ্ঠান হয়তো বন্ধ করে দেয়া হবে।
পরের দিন মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে এই ভাড়াটে বাহিনী ভেঙে দেয়া হচ্ছে এবং ওয়াগনারের যোদ্ধাদের অস্ত্র-সরঞ্জাম সমর্পণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
কিন্তু ওয়াগনার ভেঙে দেয়া হলে রাশিয়ার বাইরে ওয়াগনারের যেসব যোদ্ধা বর্তমানে মোতায়েন রয়েছে তাদের কপালে কী ঘটবে তা অস্পষ্ট।
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ওয়াগনারের তৎপরতা রয়েছে যেমন লিবিয়া সুদান, সিরিয়া, মালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, মোজাম্বিক, ভেনিজুয়েলা, বার্কিনা ফাসো এবং মাদাগাস্কার।
এই বাহিনীর বিরুদ্ধে লিবিয়া সুদান, সিরিয়া, মালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক এবং ইউক্রেনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
জাতিসঙ্ঘের একটি কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, যদি রাশিয়ার সরকারের সাথে এই প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক খুব চটে যায় এবং এটি ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের আর অস্ত্র-রসদ সরবরাহ করবে না।
সূত্রটির মতে, তাতে ওয়াগনারের যোদ্ধা এবং কর্মীদের বেতন-ভাতা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, তাদের রাজনৈতিক এবং সামরিক সমর্থন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যার ফলে বিশেষ করে লিবিয়া সুদান, সিরিয়া, মালি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে তারা বিপদে পড়ে যেতে পারে।
তার অর্থ, আফ্রিকাতে ওয়াগনারের যেসব যোদ্ধা মোতায়েন রয়েছে তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং তারা অন্যত্র কাজ খোঁজা শুরু করতে পারে। আর তাতে সামরিক এবং রাজনৈতিকভাবে বিক্ষুব্ধ ওই দেশগুলোতে বিপদ বেড়ে যেতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ওয়াগনারের যোদ্ধারা স্থানীয় বেসামরিক লোকজনের জন্য আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে।
আফ্রিকা এবং সিরিয়ায় ওয়াগনার ঠিক কী কাজ করছে? এবং রুশ সরকার যদি এই সংস্থাকে ভেঙে দেয় এবং সাহায্য বন্ধ করে দেয়, তাহলে এসব দেশগুলোতে তার পরিণতি কী হতে পারে?
লিবিয়া
লিবিয়ায় ওয়াগনার বাহিনীকে প্রথম দেখা যায় ২০১৯ সালে যখন তারা ত্রিপলির সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইতে পূর্ব লিবিয়ার নিয়ন্ত্রণকারী মিলিশিয়া নেতা এবং সাবেক জেনারেল খালিফা হাফতারের পক্ষে যোগ দেয়।
জেনারেল হাফতারের বাহিনী ত্রিপলির প্রতিরক্ষা ভাঙতে ব্যর্থ হলে অচলাবস্থা কাটাতে তিনি ওয়াগনারকে বিশেষ যোদ্ধা বাহিনী হিসেবে নিয়োগ করেন।
সম্মুখ রণাঙ্গনে ওয়াগনারের অভিজ্ঞতা, স্নাইপিং করার দক্ষতা এবং আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে গোয়েন্দা তথ্য জোগাড়ের সক্ষমতার কারণে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। ত্রিপলির দক্ষিণাঞ্চলের শহরতলীতে হাফতারের বাহিনী ঢোকার সুযোগ করে নেয়। কিন্তু লিবিয়ার ওই যুদ্ধে ওয়াগনার সংশ্লিষ্টতায় ভয়াবহ অশুভ কিছু প্রবণতার সূচনা হয়।
২০২১ সালে বিবিসির একটি অনুসন্ধানে প্রমাণ হয়, ওয়াগনার বেসামরিক লোকজনকে নির্বিচারে হত্যা করেছে, বেআইনি ল্যান্ড মাইন ব্যবহার করেছে এবং ত্রিপলির চারপাশে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িতে বিস্ফোরক দিয়ে ফাঁদ তৈরি করেছে।
কিভাবে এবং কোথা থেকে ওয়াগনার অস্ত্র-সরঞ্জাম পায় তাও বিবিসির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।
গোপন নথি ঘেঁটে ওয়াগনারের অস্ত্র-সরঞ্জামের যে তালিকা বিবিসি পায় তা দেখানো হয়েছিল জাতিসঙ্ঘের কর্মরত ব্রিটিশ সামরিক বিশেষজ্ঞ ক্রিস বব স্মিথকে। তার বিশ্লেষণে বলেছিলেন, অধিকাংশ অস্ত্র-সরঞ্জামই অত্যাধুনিক যেগুলো বর্তমানে রুশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করে। বোঝাই যায় তাদের টাকার সরবরাহ যথেষ্ট এবং গোপন না হলেও সর্বাধুনিক সামরিক প্রযুক্তি তারা পায়। মনে হয় যেন ওয়াগনার রুশ সেনাবাহিনীরই অনানুষ্ঠানিক একটি অংশ।
এমন খবরও অনেকবার বেরিয়েছে যে লিবিয়াতে ওয়াগনারের সরবরাহ আসে রুশ বিমান বাহিনীর আন্তানভ পরিবহন বিমানে করে যেসব বিমান সিরিয়ার রুশ নিয়ন্ত্রিত লাতাকিয়া বিমানঘাঁটি থেকে পূর্ব লিবিয়ার একাধিক বিমানবন্দরের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করে।
সুতরাং, লিবিয়াতে ওয়াগনার যে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সাহায্য পাচ্ছিল তা পরিষ্কার।
সে কারণে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের সাহায্য বন্ধ করে দিলে লিবিয়ায় ওয়াগনারের শক্তি এবং অবস্থানের ওপর তার বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
লিবিয়ায় স্থানীয় সূত্রগুলো বিবিসিকে বলেছে শনিবার রাশিয়ায় ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর লিবিয়ায় যে সব অঞ্চলে ওয়াগনারের অবস্থান রয়েছে সেখানে চোখে পড়ার মত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
মালি এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক
শনিবারের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর অবশ্য রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন মালি এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে রুশ সামরিক প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে। আফ্রিকায় প্রভাব বিস্তারে রাশিয়ার আকাঙ্ক্ষা এ থেকে সহজেই বোঝা যায়।
ফলে শনিবারের অভ্যুত্থানের ফলে অদূর ভবিষ্যতে মালিতে সেদেশের সামরিক সরকারের আমন্ত্রণে ২০২১ সাল থেকে যে হাজার খানেক ওয়াগনার কর্মী তৎপর রয়েছে তাদের হয়ত তেমন কোনো অসুবিধা হবে না।
কারণ ২০২০ সালের আগস্টে সেখানে কর্নেল আসিমি গোইটা ক্ষমতা দখল করে নওয়ার পর সেদেশে রাশিয়ার যে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক প্রভাব বেড়েছে তার সাথে ওয়াগনারের তৎপরতার যোগসূত্র রয়েছে।
মালির সরকার অবশ্য সবসময় বলে তারা ওয়াগনারকে কোনো কাজে নিয়োগ দেয়নি, যদিও রুশ সামরিক প্রশিক্ষকদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার কথা তারা স্বীকার করে।
২০১৩ সাল থেকে আল কায়েদা এবং অন্যান্য কট্টর ইসলামি মিলিশিয়াদের সাথে লড়াইতে মালির সরকারকে সাহায্য করতে যে কয়েক হাজার ফরাসী এবং অন্য কিছু ইউরোপীয় দেশের সৈন্য মালিতে ছিল ওয়াগনার ঢোকার পর তারা চলে যায়।
তবে তাতে মালিতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র সংঘাতের খবর নথিবদ্ধ করে এসিএলইডি ইনফো নামে যে সংস্থা তাদের পরিসংখ্যান বলছে ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত মালিতে সহিংসতা বেড়েছে দ্বিগুণ এবং সেসবে মৃত্যু হয়েছে প্রধানত বেসামরিক লোকজনের।
মধ্যাঞ্চলীয় শহর মৌরাতেতে সপ্তাহব্যাপী এক সামরিক অভিযানে ওয়াগনার যুক্ত ছিল, যেখানে নিহত হয়েছিল প্রায় পাঁচ শ’ বেসামরিক লোক। জাতিসঙ্ঘ ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য মালির সেনাবাহিনী এবং ‘বিদেশী বাহিনীকে অভিযুক্ত করে। যুক্তরাষ্ট্র মালির দুই সামরিক কর্মকর্তা এবং মালিতে ওয়াগনারের কম্যান্ডারের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপায়।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পরও মালিতে ওয়াগনারের তৎপরতা কমেনি। উত্তরের গোসি, মেনাকা এবং গাও শহর থেকে ফরাসী সৈন্যরা চলে গেলে দ্রুত সেসব ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয় ওয়াগনার।
মালিতে সামরিক সরকারের সমর্থকরা প্রায়ই সোশাল মিডিয়ায় বলছে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষীদের সরিয়ে রুশ সৈন্য মোতায়েন করতে হবে।
মালি রুশ সাহায্য সহযোগিতার ওপর কতটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে তা বোঝা যায় যখন ১৬ জুন স্বয়ং সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুলায়ে দিউপ দ্রুত জাতিসংঘ বাহিনীর প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
এখন ক্রেমলিন এবং ওয়াগনারের মধ্যে উত্তেজনার কারণে মাালিতে যদি এই রুশ ভাড়াটে বাহিনীর তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে কট্টর ইসলামি মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো তার সুযোগ নিতে পারে।
একইভাবে প্রিগোঝিনের অভ্যুত্থান নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক (সিএআর), যদিও সেখানে ২০১৭ সাল থেকে নানা ক্ষেত্রে তৎপর ওয়াগনার ।
বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইতে মস্কো এবং সিএআর সরকারের একটি নিরাপত্তা চুক্তি হওয়ার পর শত শত রুশ সামরিক প্রশিক্ষক এবং উপদেষ্টা সেদেশে মোতায়েন করা হয়। তবে ওয়াগনার সেদেশে বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের বিভিন্ন খনিজ সম্পদ, দামি কাঠ এবং এমনকি ভোদকার ব্যবসায় জাড়িয়ে গেছে ওয়াগনার গোষ্ঠী।
সিএআর-এ বিদ্রোহীদের কোয়ালিশন সিপিসির সাথে লড়াইতে ওয়াগনার বেশ সাফল্য পাচ্ছে। ফলে প্রেসিডেন্ট ফস্টিন টুডেরার সরকার এই ভাড়াটে সেনা দলের ওপর বেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সরকারি নেতাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তার ভার এখন ওয়াগনারের হাতে। কিন্তু যেহেতু বিদ্রোহীদের যথেষ্ট জনসমর্থন রয়েছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের সময় বেসামরিক লোকজনের ওপর নির্যাতনের অনেক অভিযোগ ওঠে ওয়াগনারের বিরুদ্ধে।
এ বছরের শুরুর দিকে মার্কিন অর্থ মন্ত্রণালয় অভিযোগ করে যে মালি এবং সিএআর-এ ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনী ‘গণহারে হত্যা, ধর্ষণ, শিশু অপহরণ’ সহ নানারকম অপরাধে লিপ্ত।
প্রিগোঝিনের বিদ্রোহের পর ওয়াগনারের ভেতর যে বিভেদ দেখা দেবে তাতে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে অর্থনৈতিকভাবে লোভনীয় সব কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ তারা হারাতে পারে।
আরেকটি ভয় হচ্ছে যে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকলে সিএআর-এ ওয়াগনারের ভাড়াটে যোদ্ধাদের সাথে বিদ্রোহীদের যোগাযোগ তৈরি হতে পারে, বিশেষ করে খনিজসম্পদ সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে। এবং তা হলে চাদ বা সুদানের মত প্রতিবেশী দেশগুলোতে স্থিতিশীলতা আরো হুমকিতে পড়তে পারে।
তবে প্রেসিডেন্ট টুডেরার সরকারের বড় ভরসা হচ্ছে যে তাদের সাথে মস্কোর সরাসরি সম্পর্ক এখন দিন দিন ঘনিষ্ঠ হচ্ছে।
সিরিয়া
সিরিয়ায় ওয়াগনারের সংশ্লিষ্টতার প্রেক্ষাপট অবশ্য পুরোপুরি ভিন্ন। ২০১৫ সালে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দেশের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নিয়ে বাশার আল আসাদ সরকার রুশ সেনাবাহিনীকে আমন্ত্রণ জানায়।
রাশিয়ার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি পাল্টে যায় এবং এখন দেশের সিংহভাগ এলাকা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। তবে তার জন্য সিরিয়ার জনগণকে অসামান্য মূল্য দিতে হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে রুশ বাহিনী ২০১৫ সাল থেকে যেভাবে বিভিন্ন শহর ও জনপদে বোমাবর্ষণ করেছে তাতে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে।
ভূমধ্যসাগরের উপকূলে সিরিয়ার লাতাকিয়া বিমান ঘাঁটি এখন পুরোপুরি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এখান থেকে আফ্রিকার বিভিন্ন জায়গায় ওয়াগনারের কাছে রসদ সরবরাহ করা হয়।
সিরিয়ার ভেতরেও ২০১৫ সাল থেকেও ওয়াগনার তৎপর। তাদের অবস্থান মূলত সেদেশের তেলের খনিগুলোর কাছে যেখানে আইসিসের তৎপরতা রয়েছে।
সিরিয়ায় মোতায়েনের দুই বছরের মধ্যেই ওয়াগনারের বিরুদ্ধে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতে থাকে।
২০১৭ সালে একজন সিরীয়কে নির্যাতন করে হত্যার পর তার লাশ জ্বালিয়ে দেয়ার ছবি ওয়াগনারের যোদ্ধারা নিজেরাই তুলেছিল।
ওই ভিডিও ক্লিপ অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায়, যা দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়। নিহত ব্যক্তির একজন আত্মীয় পরে মস্কোতে ছয়জন ওয়াগনার যোদ্ধার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে রাশিয়া তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরঞ্চ তাদের একজনকে প্রেসিডেন্ট পুতিন সাহসিকতার জন্য পুরষ্কার দিয়েছিলেন।
সিরিয়ায় রুশ উপস্থিতি যেহেতু একান্তই রাশিয়ার সরকারি ব্যাপার তাই ক্রেমলিনের সাথে ওয়াগনারের বিরোধের তেমন কোনো প্রভাব সিরিয়ায় পড়বে না।
তবে সিরিয়ায় যেসব ওয়াগনার যোদ্ধা তৎপর তারা এখন কী করে সেদিকে অনেকেরই নজর থাকবে। কারণ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিশ্বের অনেকগুলো শক্তিধর দেশ জড়িয়ে গেছে।
সূত্র : বিবিসি